সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন
নিয়ামুর রশিদ শিহাব, গলাচিপা(পটুয়াখালী) সংবাদদাতা।
প্লাস্টিক সামগ্রীর ভীড়ে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশ শিল্প আজ চরম অস্তিস্থ সংকটে। প্রয়োজনীয় পুঁজি, সঠিক উদ্যোগের অভাব ও উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যায্য মূল্য না থাকায় অনেকে কারিগররা পাল্টাচ্ছে তাদের পেশা। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে পিতৃ-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী পেশাকে এখনও যারা আগলে ধরে রেখেছেন তারাও রয়েছেন নানা সমস্যায়।
বাজারে প্রচলিত প্লাস্টিক দ্রব্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে তারা হয়ে পড়েছেন কোনঠাসা। ফলে আবহমান বাংলার এ শিল্পের ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার বাঁশ শিল্পীদের ভাগ্যে নেমে এসেছে দুর্দিন।
একসময় মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের মধ্যে বাঁশের তৈরি দ্রব্য সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা ছিল অনেক। কুলা, ডালা, খাঁচা, চালনি, চাটাই, ডোল, ঝুড়ি, পলো প্রভৃতি বাঁশজাত পণ্যের ছিল ব্যাপক চাহিদা। এছাড়া তৈরি করা হতো বাঁশের তৈরি বিভিন্ন শো-পিচ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক বিজ্ঞানের প্রসারতায় বর্তমানে বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী কেউ ব্যবহার করছে না।
এর বিকল্প হিসেবে অনেকেই প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করছে।সাশ্রয়ী মূল্যসহ টেকসই, উজ্জ্বলতা ও অধিক স্থায়ীত্বের কারনে এসব প্লাস্টিক সামগ্রী দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্লাষ্টিক ব্যবহারের ক্ষতিকর দিকটা বেশি তা অনেকের জানা নেই। এটি শত বর্ষেও মাটিতে মিশে না। ফলে মাটিতে কোনো ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় না। এছাড়া এটি তৈরির সময় যে গ্যাস নির্গত হয় তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই এর ব্যবহার দিনদিন কমিয়ে বাঁশ শিল্পের প্রতি আগ্রহী হওয়া সবার দায়িত্ব।
এক সময়ে পটুয়াখালী জেলার প্রতিটি উপজেলার গ্রামীন জনপদে সমান তালে বাঁশের তৈরি সামগ্রী তৈরি করা হতো। গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক বাঁশ শিল্পী ছিল।কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বাঁশ শিল্পে বিরাজ চরম মন্দাবস্থার কারনে অনেকেই ঝিমিয়ে পড়েছেন।
একদিকে বাজারে চাহিদার অভাব, অন্যদিকে বাঁশের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাঁশ শিল্পীদের অনেকেই তাদের পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকে বেকারত্বে করাল অভিশাপে পড়েছেন।
বাঁশ শিল্পীরা জানান, বাপ-দাদার পেশা বলে আকড়ে ধরে আছি।
পরিশ্রম বেশি কিন্তু আয় কম।যার কারণে আগের চেয়ে বর্তমানে সংসার পরিচালনায় হিমশীম খেতে হচ্ছে। একদিকে যেমন খাবার যোগানের চিন্তা অন্যদিকে ছেলেমেয়ে পড়ালেখার করানো চাপ।তাই চাহিদা ও মুনাফা ভাল না থাকায় পরিবার চালোনো খুব কষ্টকর।
বিজ্ঞ লোকরা জানান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বাঁশ শিল্পকে পৃষ্টপোষকতার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহন করা উচিত। নতুবা অচিরেই এ শিল্প হারিয়ে যাবে বাংলার বুক থেকে।
Leave a Reply